চাঁদা না দেয়ায় কচুয়ায় প্রকৌশলীর উপর উপজেলা চেয়ারম্যানের হামলা, থানায় মামলা।

প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২০

চাঁদা না দেয়ায় কচুয়ায় প্রকৌশলীর উপর উপজেলা চেয়ারম্যানের হামলা, থানায় মামলা।


কচুয়া (চাঁদপুর) প্রতিনিধি।। 

চাঁদপুরের কচুয়ায় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারকে মারধরের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান শিশিরকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০ জুলাই সোমবার কচুয়া থানায় এ মামলাটি করেন হামলার শিকার ইঞ্জিনিয়ার। এদিকে দ্রুত আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা এবং বিচার না হলে সারাদেশের শিক্ষা প্রকৌশলী বিভাগের প্রকৌশলীরা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার নূর আলম।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান শিশির, কচুয়ার কোয়া গ্রামের হোসেন, রসুলপুর গ্রামের জহির হোসেনসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জন।

মামলার এজাহারে হামলার শিকার ইঞ্জিনিয়ার নূর আলম উল্লেখ করেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ তলা ভিত বিশিষ্ট কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ দরপত্রের মাধ্যমে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্স (জেবি)। এ কাজের তত্ত্বাবধান করে আসছেন ঠিকাদারের লোক আশরাফুল আলম। স্কুলটির দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলা অবস্থায় আমি তা পরিদর্শনের জন্য যাই। সেখানে যাওয়ার আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপায়ন দাস শুভ-এর অফিসে গিয়ে উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে আলোচনা করি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্কুল ভবনের কাজ পরিদর্শনে যাওয়া পর হঠাৎ দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির তার ১৫-২০ জনের একটি দল নিয়ে সেখানে যান। এ সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনেই কাজ নিয়ে আমাকে এবং তত্ত্বাবধানকারীকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমার নাক-মুখে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে হত্যার উদ্দেশে হুমকি-ধমকি দেন। পরবর্তীতে তারা দড়ি নিয়ে আসে আমাকে বেঁধে রাখার জন্য। এ সময় সাইটের বাঁশ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ডান পায়ের হাঁটুতে আঘাত করেন। পরে অন্য আসামিরাও বাঁশের লাঠি দিয়ে আমার পিঠের ওপর পরপর বারি মেরে আমার পিঠে ও পায়ে জখম করে। এ অবস্থায় কাজের তত্ত্বাবধানকারী এগিয়ে আসলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে মারধর করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে চাইলেও হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন মোটরসাইকেল নিয়ে হাসপাতালের সামনে এসে আমাকে ধাওয়া করে। এ অবস্থায় আমি প্রাণভয়ে সেখান থেকে এসে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।’

হামলার শিকার ইঞ্জিনিয়র নূর আলম বলেন, দ্রুত আমার ওপর হামলার যথাযথ ব্যবস্থা ও বিচার চাই। তা না হলে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সারাদেশের ইঞ্জিনিয়ররা আন্দোলনে নামবেন। তিনি বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। আমাদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইডিইডি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দ্রুত এ ঘটনার বিচার না হলে সারাদেশের আমাদের প্রকৌশলীরা কর্মবিরতে যাবেন।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, রবিবার কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর নির্মাণাধীন ভবনের কাজ পরিদর্শনে গেলে হঠাৎ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির তার লোকজন নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

হামলার শিকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলম  এর আগে জানান, গত দুইদিন আগে কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের জন্য কিছু পাথর আসে। ওই পাথরগুলোর বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। আমি তাদের জানাই, যদি পাথরের মান ভালো না হয়, তাহলে রিজেক্ট করে দেবো এবং ঠিকাদারকে পাথরগুলো ফেরত নিয়ে যেতে বলবো। এছাড়া ওই সাইট থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান কয়েক বস্তা সিমেন্ট চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সিমেন্ট না দেওয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে দু’ দিন আগে সাইটের কাজ বন্ধ করে দেন। পরে আমরা খবর পেয়ে সাইট পরিদর্শনে যাই।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন,,