নান্দাইলে গরুর লাম্পি স্কিন; মিলল ৪০ হাজার ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ১:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২০

ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন গ্রামে গত এক মাস ধরে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ নামে (এলএসডি) এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে ও এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গরু মারাও যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের।

একপর্যায়ে স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের হস্তক্ষেপে GOAT POX VACCINE নামে  ৪০ হাজার ভ্যাকসিন নান্দাইলে এসেছে। শনিবার ঢাকা থেকে আসা এই ভ্যাকসিন নান্দাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার (৯ মে) থেকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গরুর শরীরে ভ্যাকসিন দেবেন মাঠকর্মীরা।

স্থানীয় সুত্র জানায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আক্রান্ত হচ্ছে শতশত গরু-বাছুর। মাঠপর্যায়ে নেই কোনো তদারকি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে মারা গেছে প্রায় ২টি গরু। এ রোগের প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক ও সঠিক ওষুধ না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। চিকিৎসকরা বলেছেন, এটা ভাইরাসজনিত একটা রোগ। মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে গরুর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মলয় কান্তি জানান, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার গরু-বাছুর রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হচ্ছে গরু-বাছুর। তবে খামারি বা কৃষকরা বলছেন এ সংখ্যা হাজার হাজার।

বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গরুর মালিক ও খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ তাঁদের গরুগুলি বসা থেকে দাঁড়িয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। গরুগুলো কাঁপতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মশা-মাছি ও পোকার মাধ্যমে ছড়ায় এ রোগ। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়। গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসে। পাশাপাশি গরুর শরীরে বসন্তের মতো গুটি গুটি চাকা দেখা দেয়। পরে সেখান থেকে পুঁজ জমে ফেটে গিয়ে মাংস খসে পড়ে। ফলে দুধ উৎপাদন কমে যায়।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, গরুর এই লাম্পি স্কিন মহামারি আকার ধারণ করেছে। মাঠে নেই কোনো চিকিৎসক। এ অবস্থায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ময়মনসিংহ ৯ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজিকে ফোন দিয়ে অবহিত করেন। পরদিন ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাণিসম্পদের উপপরিচালক নীল রতন পন্ডিতকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম গঠন করে নান্দাইলে পাঠান। তাঁরা সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. লাম্পি স্কিনে গরু আক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মলয় কান্তি মোদক কার্যালয়ে উপস্থিত ছাড়া অন্যরা তেমন তৎপর ছিলেন না। ফলে একরকম বিনা চিকিৎসায় আক্রান্ত গরু মরেছে ও অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন বলেন, আমরা করোনার মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে বেকায়দায় পড়েছি। এ অবস্থায় কৃষকের একমাত্র সস্বল তাঁর গৃহপালিত গরু-বাছুরের যে ভয়ানক রোগ হয়েছে তাকে আমরা এনিমেল করোনা বলতে পারি। এ অবস্থায় গরু-বাছুর বাঁচাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করি। তাঁরাই এখন নান্দাইলের জন্য ৪০ হাজার ভ্যাকসিন পাঠিয়েছেন। এখন আশা করা যায় সুস্থ গরুর শরীরে এই ভেকসিন দিলে সমস্যার সমাধান হবে।

নান্দাইল উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মলয় কুমার মোদক জানান, এমপি সাহেবের কারণেই আমরা দ্রুত এই ভ্যাকসিন পেয়েছি। শনিবার থেকেই কর্মীদের গ্রামে গিয়ে গরুর শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।