শপিমল হতে পারে সর্বনাশা মৃত্যু ফাঁদ দৈনিক স্বদেশকণ্ঠ দৈনিক স্বদেশকণ্ঠ প্রকাশিত: ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২০ রোজার ঈদ সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে ১০ মে থেকে শপিং মল ও দোকানপাট খোলার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুরো দেশ কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে এ ধরনের ঘোষণা এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সারা দেশের দোকানপাট, শপিং মলগুলো আগামী ১০ মে থেকে সকাল ১০টায় খুলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি শপিং মলের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শপিং মলে আগত যানবাহন অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঈদে শপিং মলগুলো খুলে দিলে অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করবেন। দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও যদি বাইরে বের হন, সেটিও সর্বনাশ ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। এতগুলো মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলে, সেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আমাদের মতো একটি জনবহুল দেশে সীমিত পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করা বা দোকান খোলার কোনও সুযোগ নেই। ঈদের সময় এসব মার্কেট খুললে প্রতিদিন শত শত মানুষের সমাগম হবে এবং এসব স্থানে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেবে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। ক্রমেই করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে আক্রান্তের হিসাবে অন্যান্য জেলাকে ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। শুধু একদিনে আক্রান্ত ৭৯০ জন মানুষ। যদিও ৭ এপ্রিল কিছুটা কমেছে, তাও সেটা ৭শ’র কম নয়। এটাকে সর্বনাশের শুরু বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মে মাসে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা। যদি আমরা এখনই সবকিছু বন্ধ করে দিতে না পারি তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। লকডাউনের ক্ষেত্রে সরকার কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দিন যত গড়াচ্ছে, সারা দেশের সব জেলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন হাজার হাজার করোনা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সরা। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের সংকট দেখা দিচ্ছে। মহামারি করোনা পৃথিবীর সব অঞ্চল ও দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে তিনশ’ কোটির বেশি মানুষ আজ ঘরবন্দি। বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামছে। বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে এক অস্বাভাবিক অবস্থা। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে করোনায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঈদকে সামনে রেখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে অনেকেরই মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তায় যদি সরকার এবং বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে আসেন তাহলে এই লকডাউন অন্তত আরও কিছু দিন বর্ধিত করা সম্ভব। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রি করে যারা এতদিন অনেক মুনাফা করেছেন, এ মুহূর্তে তাদের উচিত সেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো। এই দুঃসময়ে যেসব ক্রেতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে চান, তারা যাতে সরাসরি ন্যায্য দাম দিয়ে তাদের পণ্য কিনতে পারেন সে ব্যবস্থা সরকারের করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনলাইনে সেসব ব্যবসায়ীর পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যায় কিনা সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীদের চাপে দেশকে এত বড় ঝুঁকির মুখে ফেলা অমানবিক পদক্ষেপ। ঈদের সময় শপিং মল ও দোকানপাট কেউ যদি না খোলেন, এতে সরকারের কোনও আদেশ বা নির্দেশ অমান্য করা হবে না। আমরা কেউ যদি বাড়ির বাইরে বের না হই এতে কোনও সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গ হবে না। সরকার কাউকে শপিং মলে যেতে বাধ্যও করছে না। কাজেই আমরা কী করবো সেটি সম্পূর্ণ আমাদের সিদ্ধান্ত। যারা কুটির শিল্পী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চান, তারা সরাসরি ন্যায্য দাম দিয়ে তাদের কাছ থেকে অনলাইনে পণ্য ক্রয় করুন, যাতে কোনও মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি এই মুনাফা লুটতে না পারে। ঈদ বাজেটের কিছু অংশ অসহায়দের দান করুন। স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার। স্বপ্ন কি সত্যি বাড়ি পৌঁছাতে পারবে? ছোট বড় সবাই চায় ঈদে ভালো, সুন্দর জামা-কাপড় কিনতে। কিন্তু জীবন আজ বিপন্ন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না। মানুষ হিমশিম খাচ্ছে প্রতিদিন এর খাবার জোগাড় করতে! আমার মনে হয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে শপিং মল ও দোকানপাট খোলার এই সর্বনাশা সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। জীবন ও জীবিকা অবশ্যই পাশাপাশি চলতে হবে, কিন্তু জীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কষ্ট করে হলেও আরও কিছু দিন সময় অন্তত দিন। লেখক: মিতি সানজানা, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট SHARES অপরাধ বিষয়: