চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শিক্ষকের জমি দখলের চেষ্টা। দৈনিক স্বদেশকণ্ঠ দৈনিক স্বদেশকণ্ঠ প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২০ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শিক্ষকের জমি দখলের চেষ্টা। এম. মতিন, (চট্টগ্রাম) রাঙ্গুনিয়া সংবাদদাতা।। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট এলাকায় আদলতের স্থিতিবস্থার নির্দেশ থাকার পরও একজন শিক্ষকের টিনের ঘর ভেঙে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে কাজী নুরুল আজিম নামের এক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে। এঘটনায় বর্তমান ঐ জমির দখলদার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী গালিব আহসান বাদী হয়ে নুরুল আজিমকে আসামী করে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম নিশ্চন্তাপুর মৌজার আর এস দাগ নং ২০১/১ ও বি এস ১১২৫১ দাগের ২ শতাংশ জমি ২৮০১ ও ২৩০৬ নং কবলা মূলে কাজী নাছির উদ্দীন ও কাজী নুরুল আনোয়ার প্রকাশ জাহাঙ্গীরের নিকট হতে একই উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন গ্রামের ড. গালিব আহসান ২০০৫ ও ২০০৭ সালে ২ শতক জমি ক্রয় করে জমির দখল বুঝে নিয়ে খাজনা খারিজ করে সেই জমিতে ভোগ দখল করে আসছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে কাজী নুরুল আজিম জমিটি তার বলে দাবী করেন। জমি দখলে নিতে চলতি মাসের ৫ জুলাই গভীর রাতে নুরুল আজিম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে অধ্যাপক ড. কাজী মো. গালিব আহসানের খরিদকৃত জমির ওপর নির্মিত টিনের ঘর ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেয় এবং ঘরে থাকা জিনিসপত্র লুটপাট করে। এনিয়ে গত ৬ জুলাই তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ নং ৪০৪/১০/৭/২০। এর আগে হয়রানি ও সামাজিকভাবে মানক্ষুন্ন করার অভিযোগ এনে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারী নুরুল আজিমের বিরুদ্ধেে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ড. গালিব আহসান। অনুসন্ধানে জানা যায়, কাজী নুরুল আজিমের বড় ভাই কাজী নুরুল আলম গত ২০০৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কাজী নাছির উদ্দীনের নিকট রেজিষ্ট্রিকৃত ৩৫২ নং কবলামূলে ১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কাজী নাছির ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর সেই জমি ড. গালিব আহসানের কাছে বিক্রি করেন। যার রেজিষ্ট্রিকৃত কবলা নং ২৮০১। বর্তমানে ড. গালিব আহসানের দখলে থাকা ২ শতাংশ জমির অপর ১ শতাংশ জমি নুরুল আজিমের ছোট ভাই মৃত কাজী নুরুল আনোয়ার প্রকাশ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ২০০৫ সালের ৯ আগষ্ট খরিদ করেন। যার রেজিষ্ট্রিকৃত কবলা নং ২৩০৬। খরিদকৃত ২ শতক জমির দলিল, নামজারি ও খাজনা পরিশোধ করে আসছেন ড. গালিব আহসান। জমির ভোগ-দখল করছেন তিনি। এদিকে ড. গালিব বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনার সুবাদে ঢাকায় বসবাস করায় তাঁর অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি দখলের পায়তারা চালিয়ে আসছে অভিযুক্ত কাজী নুরুল আজিম গং। পরে এনিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং (০৬/২০২০)। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত “মূল মোকদ্দমা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পক্ষদ্বয়কে কঠোরভাবে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন”। যা ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলতি মাসের ৫ জুলাই রাত আনুমানিক ৩ টায় কাজী নুরুল আজিম ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সহযোগী করে রামদা, চাপাতি ও সাবল নিয়ে ড. গালিবের নির্মিত টিনের ঘর ভাঙচুর করে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, টিনের ঘরে থাকা জিনিসপত্র লুটপাট করে ঐ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্ঠা করেন। তাদের সিনেমা ষ্ট্যাইলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখে পাশের ঘরের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নৈশ প্রহরী ড. গালিবের ছোট ভাই মেহেদী হাসানকে ফোনে খরবটি জানান। খরব পেয়ে তাৎক্ষণিক মেহেদি হাসান ঘটনাস্থলে আসলে নুরুল আজিমের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা রামদা ও চাপাতি দিয়ে মারতে থেড়ে আসলে প্রাণভয়ে মেহেদী হাসান দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এব্যাপারে ভুক্তোভোগী ড. কাজী গালিব আহসান বলেন, ২০০৫ ও ২০০৭ সালে আমি এই জায়গা ক্রয় করে আজ পর্যন্ত ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু ২০১৬ সালে আমার চাচা নুরুল আজিম জমিটি তার বলে দাবী করেন। গত ৫ জুলাই রাতে সন্ত্রাসী নিয়ে তিনি আমার নির্মিত টিনের ঘর ভাঙচুর করে মাটির সাথে গুড়িয়ে দেয়। চাচার নিকট থেকে এরুপ সন্ত্রাসী কাযক্রম কখনো কামনা করিনি। অথচ এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কাযক্রমের মাধ্যমে তিনি মহামান্য আদালতের নির্দেশ লংঘন করেছেন। মহামান্য আদালতের বিবেচনায় আমার ক্রয়কৃত জায়গার দখল হতে আমাকে বেদখল করার মতো ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করা মানে নিঃসন্দেহে এটি নিন্দনীয় ও আইনের লঙ্ঘন। আমি আইনের প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধাশীল। তবে তার এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমি থানায় একটি অভিযোগ (জিডি নং ১২০৬; ২৬/০২/২০) দায়ের করেছি। এব্যাপারে অভিযুক্ত কাজী নুরুল আজিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি ঘর ভেঙ্গেছি একথা সত্য নয়। আমার জায়গা আমার দখলে আছে। আমার জায়গায় কেউ ঘর নির্মাণ করেনি। পক্ষান্তরে তিনি বলেন, ‘ আমাদের জায়গার ওপর একটি টিনের ঘর ছিল, সেটা কে বা কারা ভেঙ্গেছে আমি জানিনা। এটা আমার পৈত্রিক সম্পত্তি। আর তারা যাদের কাছ থেকে জমি খরিদ করেছে, সে জায়গা তাদের দখলে আছে।’ পরে প্রতিনিধির সাথে সামনাসামনি বসে কথা বলতে চাই জানিয়ে ফোন কল কেটে দেন। রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (ওসি) মোরশেদুল আলম বলেন, ‘ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ SHARES সারা দেশ বিষয়: